
‘অভিষেকের ভাবমূর্তি নষ্টের মরিয়া চেষ্টায় সিবিআই’! তৃণমূলের ‘সেনাপতি’র পাল্টা তোপ চার্জশিট নিয়ে
সিবিআই ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে! প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ মামলার অন্যতম অভিযুক্ত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র (‘কালীঘাটের কাকু’)-এর বিরুদ্ধে দেওয়া চার্জশিটে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা একটি অডিয়ো ক্লিপের সূত্রে তাদের চার্জশিটে ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়’ নামটি উল্লেখ করার খবরের পর এমনই বিবৃতি দিয়েছেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেকের আইনজীবী সঞ্জয় বসু।
সিবিআইয়ের ওই চার্জশিটের ভিত্তিতে বুধবার সকালে আনন্দবাজার অনলাইন একটি খবর প্রকাশ করেছে। চার্জশিটে (২৮ পাতার ওই চার্জশিটের প্রতিলিপি আনন্দবাজার অনলাইনের হেফাজতে রয়েছে) সুজয়কৃষ্ণ-সহ কয়েক জনের কথোপকথনের একটি অডিয়ো ক্লিপের কথা জানিয়ে সিবিআই লিখেছে, ওই অডিয়োয় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের নামের উল্লেখ শোনা গিয়েছে। পাশাপাশিই চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, অডিয়োয় জনৈক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও শোনা গিয়েছে। অডিয়ো ক্লিপটির ‘সত্যতা’ যাচাই করার জন্য সেটি সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্সেস ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়েছে সিবিআই। পাশাপাশি, সুজয়কৃষ্ণ এবং মামলার অপর দুই অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষ এবং শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠস্বরের নমুনা দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য। যদিও সাক্ষীদের মধ্যে কয়েক জন ওই অডিয়োর সত্যতার কথা স্বীকার করেছেন বলে সিবিআই সূত্রের খবর।
তবে কে সেই অভিষেক, কী তাঁর পরিচয়, তার কোনও উল্লেখ নেই ২৮ পাতার চার্জশিটে। যদিও অন্যদের পরিচয় লেখা রয়েছে। ঘটনাচক্রে, ওই খবর প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অভিষেকের আইনজীবী সঞ্জয় বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, সিবিআই তাঁর মক্কেলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চক্রান্ত করছে। যা থেকে এই সম্ভাবনার অবকাশ তৈরি হচ্ছে যে, চার্জশিটে যে জনৈক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুধু নামটুকু লেখা হয়েছে, তিনি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং তিন বারের লোকসভা সাংসদ।
চার্জশিটে পার্থের ক্ষেত্রে তাঁর প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পরিচয় লিখেছে সিবিআই। সুজয়কৃষ্ণের পরিচয় দিয়েছে ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর ‘চিফ অপারেটিং অফিসার’ হিসাবে। কিন্তু অভিষেকের ক্ষেত্রে সিবিআই কোনও পরিচয় চার্জশিটে উল্লেখ করেনি। তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, না কোনও ব্যবসায়ী, না কি শিক্ষা বা অন্য কোনও সরকারি দফতরের সঙ্গে যুক্ত, সে বিষয়ে চার্জশিটে কোনও উল্লেখই নেই।
অভিষেকের আইনজীবীর দাবি, তাঁর মক্কেল ইডি এবং সিবিআই-কে তদন্তে ‘পূর্ণ সহযোগিতা’ করেছেন। দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা যখনই তাঁকে তলব করেছে, তখনই তিনি উপস্থিত হয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্রও সরবরাহ করেছেন। কিন্তু তার পরেও সিবিআই ‘ভিত্তিহীন’ অভিযোগ করছে। অভিষেকের আইনজীবী সঞ্জয়ের বিবৃতি বলছে, ‘‘মামলার তদন্তকারী সংস্থা ইডি আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে কোনও চার্জশিট দাখিল করেনি। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অপরাধের কোনও উপাদানের উপস্থিতিও মেলেনি, তার পরেও তৃতীয় অতিরিক্ত চার্জশিট আমার মক্কেলকে হয়রানির উদ্দেশ্য ছাড়া আর কিছু নয়।’’
অভিষেকের তরফে এ-ও দাবি করা হয়েছে যে, সিবিআই তাদের দাবির ‘সমর্থনযোগ্য’ কোনও নথি বা প্রমাণ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ থেকে স্পষ্ট যে, অন্যায় ভাবে অভিষেককে ‘টার্গেট’ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আদালতে দেওয়া তাদের চার্জশিটে লিখেছে, অডিয়ো ক্লিপে সুজয়কৃষ্ণকে বলতে শোনা গিয়েছে, তাঁর কথা শুনে ওই চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ আটকে দেওয়ার জন্য বলেছিলেন অভিষেক। সুজয়কৃষ্ণ অডিয়ো ক্লিপে বলেছেন, অন্যথায় ওই প্রার্থীদের গ্রেফতার করিয়ে দেওয়া হবে অথবা তাঁদের কর্মস্থল হবে বাড়ি থেকে অনেক দূরে। খবরে চার্জশিটের বক্তব্য জেনে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের তরফে পাল্টা অভিযোগ করা হয়েছে, ‘ইডিকে কাজে লাগিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পরে একটি রাজনৈতিক শক্তি সিবিআইয়ের দিকে ঝুঁকেছে। স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির অপব্যবহার করছে। সংশ্লিষ্ট চার্জশিটে প্রমাণের স্পষ্ট অভাব থাকা সত্ত্বেও সন্দেহ (অভিষেককে নিয়ে) তৈরি করার একটি মরিয়া প্রচেষ্টা করা হয়েছে।’