
বেতন বৃদ্ধি: জুনিয়র ১০ হাজার, এসআর ১৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা, ছাড় প্র্যাকটিসেও, ডাক্তারদের পাশে দাঁড়ালেন মমতা
অভয়াকাণ্ডের প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন সিনিয়র-জুনিয়র নির্বিশেষে রাজ্যের হাজার হাজার চিকিৎসক। মতানৈক্য, ক্ষোভ ও সংঘাতের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল সরকারের সঙ্গে। সেই পরিস্থিতি আর নেই। সোমবার সর্বস্তরের জুনিয়র ডাক্তার ও এসআরদের ভাতা বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করে তা বেশ বুঝিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী প্রাইভেট প্র্যাকটিসে পর্যন্ত কিছুটা ছাড় দেওয়ার কথা উঠে এল তাঁর গলায়। সেই ভাষণ শুনে মূল ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহ এবং সংলগ্ন চারটি হল ভেসে গেল কয়েক হাজার ডাক্তারের করতালিতে। কারও পক্ষে আঁচ করাই সম্ভব নয় যে, গত ক’মাসে তাঁদের একটা বড় অংশের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর রীতিমতো টেনশনের সম্পর্ক গিয়েছে।
এদিন দুপুরে ‘চিকিৎসার আর এক নাম সেবা’ শীর্ষক সম্মেলনের আয়োজন করেছিল দি স্টেট লেভেল গ্রিভান্স রিড্রেসাল কমিটি। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর নয়, বরং অনেক বেশি করে ‘দিদি’রূপে পাওয়া গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অভয়াকে ‘বোন’ বলে ডেকে ক্ষুব্ধ জুনিয়র ডাক্তারদের ক্ষতে মানবিক প্রলেপ দিলেন। তারপরই কার্যত ‘কল্পতরু’ হয়ে ঘোষণা করলেন ভাতা বৃদ্ধির কথা। আর সেটা মোটেই কম নয়, ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। তবে পাশাপাশি তিনি এও জানিয়ে দেন, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কোনও রাজনীতি বরদাস্ত করব না। ডাক্তারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি নয়, আপনাদের রং সেবার।’
প্রাইভেট প্র্যাকটিসের পরিধি কর্মস্থলের ২০ কিমির মধ্যে বেঁধে দিয়ে সরকারি সিনিয়র ডাক্তারদের উপর চাপ বাড়িয়েছিল রাজ্য সরকার। এদিন সেই কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করার কথাও জানান মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘২০ কিমির বদলে ৩০ কিমির মধ্যে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করুন আপনারা। কিন্তু হ্যাঁ, সরকারি হাসপাতালে আট ঘণ্টা ডিউটি করে, তারপর।’ কলেজে কলেজে খেলাধুলোর পরিকাঠামোর উন্নতিতে ২ কোটি টাকা অর্থসাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও শোনা গিয়েছে তাঁর গলায়। পাশাপাশি ঘোষণা করেন স্যালাইনকাণ্ডে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারদের সাসপেনশন প্রত্যাহার করার কথাও।
গ্রামীণ এলাকার স্বাস্থ্য প্রশাসনের স্তম্ভ বিএমওএইচদের জন্যও উপহার ছিল মমতার। তিনি বলেন, কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করার জন্য বিএমওএইচদের ১২ মাসের পাশাপাশি আরও অর্ধেক মাসের (মোট সাড়ে ১২ মাসের) অতিরিক্ত বেতন দেওয়া হবে। নিরাপত্তা বাড়াতে আরও এক্স সার্ভিসম্যান নিয়োগ, কলেজে কলেজে ডাক্তারদের অভাব-অভিযোগকে আরও গুরুত্ব দেওয়া, স্বাস্থ্যসচিবকে ‘সমন্বয়ের অভাব আছে’ বলে ভর্ৎসনা করা এবং গ্রিভান্স সেলের দুই চিকিৎসক ডাঃ সৌরভ দত্ত ও ডাঃ যোগিরাজ রায়ের প্রশংসা—এইসব পদক্ষেপ থেকেই স্পষ্ট, মমতা এদিন ‘না’ বলে আসা মানুষজনকে ‘হ্যাঁ’ বলাতে এসেছিলেন এবং এসেছিলেন হোমওয়ার্ক করেই।
যদিও এত সবের পরও ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের তরফে ডাঃ অনিকেত মাহাতের বক্তব্য, ‘ভাতা বৃদ্ধি আমাদের প্রাপ্য ছিল। কিন্তু এদিন মুখ্যমন্ত্রীর মুখে রোগী পরিষেবার উন্নতিতে নয়া কোনও পদক্ষেপের কথা শুনলাম না।’
Hi, this is a comment.
To get started with moderating, editing, and deleting comments, please visit the Comments screen in the dashboard.
Commenter avatars come from Gravatar.